বাজে অভ্যাস দূর করার আশ্চর্য উপায়

Author:

Published:

Updated:

বদ অভ্যাস দূর করার সহজ কৌশল

আপনার কি কি বদ অভ্যাস আছে, খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন!
হ্যাঁ, গুনে শেষ করতে পারবেন না । আমরা সবাই কম বেশি বদ অভ্যাসে আসক্ত । এমন কিছু অভ্যাস আছে যেগুলো আপনাকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে দেয় না । আপনি নিজেও জানেন এবং বিশ্বাস করেন, এই অভ্যাসগুলো যদি পরিবর্তন করতে পারেন তাহলেই হয়ত আপনি আপনার সাফল্যের সোনার হরিণটি খুব সহজেই পেয়ে যাবেন ।
কিন্তু?…
এই অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করতে পারাটাই আপনার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ । আর আপনি আঁটকে আছেন এখানেই ।

অভ্যাস কি?
অভ্যাস একটি বহুদিনের নিয়মিত চর্চা । আপনি অনেকদিন ধরে একটা কিছু করে যাচ্ছেন, সেটা একপর্যায়ে আপনার অজান্তেই মনের ভেতরে ঢুকে আসন করে নেবে মস্তিষ্কে । তখন আপনার অবচেতন মন জানবে, এটাই আপনার করা উচিত । এটাই প্রকৃত আপনি । যদিও সচেতন আপনি এই অভ্যাসের জন্য বিরক্ত, বিব্রত এবং হতাশ । এমন অবস্থায় বারবার চেষ্টা করেও আপনি এই কাজটি থেকে বের হতে পারবেন না । এটাই বদ অভ্যাস ।

কীভাবে পরিবর্তন করা যায়?
একটা কথা প্রচলিত আছে- মানুষ অভ্যাসের দাস । যে কাজগুল নিয়মিত করে করে আপনি বাজে অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছেন, ঠিক একইভাবে নিয়মিত এগুলোকে নিয়ন্ত্রন করার চর্চা করেই আপনার অভ্যাসকে দূর করতে পারেন । আপনার মস্তিষ্ককে নতুন করে শেখাতে হবে, বিশ্বাস করাতে হবে, আপনি যে বাজে আসক্তিতে অভ্যস্ত, সেটি প্রকৃত আপনি না ।

কীভাবে এই কাজটি করা যেতে পারে? তার জন্য কিছু কার্জকর পরামর্শ দেওয়া হল ।

১. ক্ষতিকর প্রভাবগুলো ভাবুন
আপনি যে বাজে অভ্যাসে আসক্ত তার সবচেয়ে ক্ষতিকর এবং বাজে প্রভাবগুলো নিয়ে ভাবুন । ভাবুন, এই কাজটি করে আপনি কি কি হারিয়েছেন বা আপনার কি ক্ষতি হয়েছে । অথবা কেন, এই কাজটি আপনার করা উচিত না । নিজেকে নিজে প্রশ্ন করুন । এই প্রশ্ন আপনার মধ্যে একটা খারাপ লাগা তৈরি করবে, অনুশোচনার জন্ম হবে আপনার । এতে নিজের মধ্যে এই অভ্যাস পরিবর্তনের প্রচণ্ড ক্ষুধা তৈরি হয়ে উঠবে । এটাই দরকার- যা বাড়াবে আপনার ইচ্ছাশক্তির জোর ।

২. লক্ষ্য নির্ধারণ করুন
অভ্যাস পরিবর্তন করতে যেয়ে এলোমেলোভাবে একদিন নিজেকে খুব নিয়ন্ত্রন করলেন, পরদিন আবার ছেড়ে দিলেন, তারপর আবার খানিকটা চেষ্টা- এভাবে করে অভ্যাস দূর করা যায় না । আপনাকে একটি লক্ষ্য নিয়ে এগোতে হবে সামনের দিকে । একসাথে নয়, বরং ধিরে ধিরে নিজেকে নিয়ন্ত্রণের মাত্রা বাড়াতে থাকুন । অভ্যাসের ধরণ ও আসক্তি বুঝে, লক্ষ্য নির্ধারণ করুন- দিন, সপ্তাহ, মাস হিসেবে । এবং কবে আপনি নিজেকে পুরোপুরি এই বাজে অভ্যাসটি থেকে মুক্ত দেখতে চান, তার একটা সহজ ও সম্ভাব্য আউটলাইন তৈরি করে ফেলুন ।

৩. একটি সঠিক পরিকল্পনা করে ফেলুন

যেকোন অভ্যাস পরিবর্তনে একটি পরিকল্পনার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে আপনাকে । আপনার এই অভ্যাসের কারণ কি তা জানুন । যে কারণে আপনি এই কাজে আসক্ত সেগুলোকে বর্জন করুন । ভাবুন, কোন সময়গুলোতে অথবা কাদের সাথে থাকলে আপনি এই অভ্যাস থেকে মুক্ত থাকেন । আপনি নিজেই একটি বিকল্প উপায় খুঁজে বের করুন- যেভাবে আপনি আপনার বদ অভ্যাস থেকে বিরত থাকতে পারেন । আপনি যখন জানবেন কেন, কীভাবে আপনি এই অভ্যাসে আসক্তি, তখন এর থেকে মুক্তি পাওয়া আপনার জন্য অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে । আপনার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে । এসব ব্যাপার মাথায় রেখে, আপনি আপনার পরিকল্পনা করে নিন ।

৪. ধৈর্যশীল হোন

নিজের উপর বিশ্বাস রেখে ধৈর্যশীল হতে হবে আপনাকে । খুব রাতারাতি নিজেকে পরিবর্তন করতে চেষ্টা করা থেকে বিরত থাকুন । কারণ, অভ্যাসটি যেমন আপনার একদিনে হয়নি, তেমনি এটা চাইলেই একদিনে আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন না । তাই ধৈর্য ধরে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করুন ।

৫. নিজের সাথে কথা বলুন

অটোসাজেস্ট করুন নিজেকে । এটা মারাত্মক কার্যকর একটা উপায় । অভ্যাস পরিবর্তন, আত্মবিশ্বাস বাড়ানো যেকোন ক্ষেত্রেই নিজেকে অনুপ্রাণিত করতে অটোসাজেসনের জুরি নেই । নিজেকে বলুন, আপনি এটা করতে চান না, নিজেকে বলুন, কেন আপনি এটা করতে চান না, এর ফলে আপনার কি কি ক্ষতি হচ্ছে । নিজেকে বলুন আপনার পক্ষে এই অভ্যাস দূর করা সম্ভব ।

৬. আপনার সফলতার কথা চিন্তা করুন
কল্পনায় আপনার জয়ের কথা চিন্তা করুন। ধরুণ আপনি প্রচুর জাঙ্ক ফুড ভালোবাসেন, কিছুতেই তা ছাড়তে পারছেন না। তবে চিন্তা করুন আপনার রান্নাঘর প্রচুর শাক-সবজি দিয়ে ভরপুর। আর আপনি স্বাস্থ্যকর খাবার খাচ্ছেন এবং আপনার তা ভালোও লাগছে। দেখবেন ধীরে ধীরে আপনার এই কল্পনা আপনাকে বাস্তবে সফলতা এনে দিবে। এমনি করেই প্রতিদিন কয়েকবার ভাবুন আপনি সিগারেট খাচ্ছেন না। সিগারেট ছাড়াই খুব সুন্দর সময় কাটাচ্ছেন।

৭. পারিপাশ্বিকতায় পরিবর্তন আনুন

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যক্তিগত অভ্যাসের একটি বড় প্রভাব থাকে পারিপার্শ্বিকতার । আপনার চারপাশের সবকিছু । ঘরের আসবাবপত্রের ডেকরেশন, আপনার পোশাক-পরিচ্ছদ, খাবার, এসবে পরিবর্তন নিয়ে এসে, আপনি নিজেকে নতুন করে খুঁজে পেতে পারেন । বাজে অভ্যাস পরিবর্তনে এটাও ভাল অবদান রাখতে পারে আপনার জীবনে ।

৮. সফলতাকে উদযাপন করুন

প্রত্যেক মানুষের জীবনে কিছু না কিছু সফলতা থাকে । সেটা ছোট হোক কিংবা বড় । পজেটিভ দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে সেগুলোকে ব্যাখ্যা করুন । নিজেকে তার জন্য ক্রেডিট দিন । আপনার সফলতাকে উদযাপন করুন । এতে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়বে । প্রতিজ্ঞ হতে পারবেন । বদ অভ্যাস পরিবর্তন করাটা আপনার জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Latest posts

  • ডিজিটাল মার্কেটিং কি? ডিজিটাল মার্কেটিং কেন প্রয়োজন?

    ডিজিটাল মার্কেটিং কি? ডিজিটাল মার্কেটিং কেন প্রয়োজন?

    ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কোন পণ্য বা সেবার মার্কেটিং করাকে এককথায় ডিজিটাল মার্কেটিং বলে। খুব সহজে ডিজিটাল মার্কেটিং কি এর সংজ্ঞাটা দেওয়া হলেও ডিজিটাল মার্কেটিং এতোটাও সহজ কিছু না। আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিং কি? ডিজিটাল মার্কেটিং কীভাবে করে? ডিজিটাল মার্কেটিং এর সুবিধা কি, অসুবিধা কি, ডিজিটাল মার্কেটিং পেশা হিসেবে কেমন- এই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিতভাবে জানতে…

    Read more

  • জাকারবার্গ এবং ফেসবুকের গল্প | কীভাবে কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিবেন

    জাকারবার্গ এবং ফেসবুকের গল্প | কীভাবে কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিবেন

    বর্তমানে ফেসবুক ব্যবহার করে না এমন মানুষ খুজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। আমরা অনেকেই মার্ক জাকারবার্গ এর ফেসবুকের গল্প জানি । একটি ছোট্ট রুম থেকে সারা পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পরে সকল ভাষাভাষী মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অভ্যাসকে বদলে দিয়েছে ফেসবুক । কি ভাবে মার্ক জাকারবার্গ করলেন এটা ? আপনি কি জানেন জাকারবার্গকে তার স্বপ্নের জন্য কি কি ত্যাগ করতে…

    Read more

  • বিয়ার গ্রিলসের হার না মানা গল্প

    বিয়ার গ্রিলসের হার না মানা গল্প

    ডিসকভারি চ্যানেলে ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড অনুষ্ঠানটি দেখেননি এমন লোক কমই পাওয়া যাবে । অনুষ্ঠানটি যার কারণে সারা বিশ্বে এতো জনপ্রিয়তা পেয়েছে তিনি হচ্ছেন এডওয়ার্ড মাইকেল বিয়ার গ্রিলস (Bear Grylls) । সবার কাছে বিয়ার গ্রিলস নামেই পরিচিত। তিনি একাধারে একজন লেখক, টেলিভিশন অনুষ্ঠানের উপস্থাপক, সাবেক সেনা কমান্ডো ও বর্তমানে বিশ্ব স্কাউট সংস্থার চীফ অব স্কাউট ।…

    Read more